এক সময় তারা ছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রাণ। অভিনয়ের গুণে সহজেই দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তারা। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকেও তারা পিছিয়ে নেই। বলছি চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা, শাবনূর ও মৌসুমীর কথা।ঢাকাই চলচ্চিত্রে উচ্চশিক্ষিত নায়িকাদের সংখ্যা কিন্তু হাতে গোনা। আবার অল্পদিনের ব্যবধানে খ্যাতির চূড়ায় ওঠায় নিয়মিত পড়াশোনা থমকে রয়েছে অনেকের। সেজন্যই অনেক তারকারাই নিজেদের শিক্ষাজীবন নিয়ে খুব একটা মুখ খোলেন না। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক সময়ের দাপুটে ও জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মৌসুমী, পূর্ণিমা ও শাবনূরের পড়ালেখা সহ তাদের জীবনের নানা কাহিনী ।
চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা:
ঢাকাই ছবির এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। তার চলচ্চিত্র জগতে পথচলা শুরু হয়েছিল জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এ জীবন তোমার আমার ছবির মাধ্যমে। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে, তখন তিনি ক্লাস নাইনে পড়তেন। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ২০১০ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।পূর্ণিমা অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে এফ আই মানিক পরিচালিত অপরাধ-নাট্যধর্মী লাল দরিয়া (২০০২), মতিউর রহমান পানু পরিচালিত রোম্যান্সধর্মী মনের মাঝে তুমি (২০০৩), চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) ও নাট্যধর্মী সুভা, এবং এস এ হক অলিক পরিচালিত রোম্যান্সধর্মী হৃদয়ের কথা (২০০৬) ও আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা (২০০৮)। চলচ্চিত্রে পূর্ণিমার অভিষেক হয় রিয়াজের বিপরীতে।
রিয়াজের বিপরীতেই ২৫টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।পূর্ণিমা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি টিভি নাটকেও কাজ করেছেন। ২০১১ সালে বিশ্বকবির প্রয়ান দিবস উপলক্ষে তার ছোটগল্প ল্যাবরেটরি অবলম্বনে মাহবুবা ইসলাম সুমির পরিচালনায় ল্যাবরেটরি নাটকে সেজুতি চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া একই বছর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য ঈদের পাঁচটি নাটকে অভিনয় করেন।নাটকগুলো হল আরিফ খান পরিচালিত ওই খানে যেও নাকো তুমি, শামীমা আক্তার বেবী পরিচালিত উল্টোধনুক, মাহবুবা ইসলাম সুমি পরিচালিত এখনও ভালোবাসি, এসএ হক অলিকের পরিচালনায় নীলিমার প্রান্তে দাঁড়িয়ে ও অমানিশা। ২০১৫ সালে ঈদ উপলক্ষে নির্মিত প্রেম অথবা দুঃস্বপ্নের রাত দিন নাটকে অভিনয় করেন।
শিক্ষা জীবনে পূর্ণিমা:
চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় অভিনয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এর পর থেকে অভিনয়ের পাশাপাশি লেখাপড়াও চালাতে থাকেন নায়িকা পূর্ণিমা। তবে দিন যত যেতে থাকে পূর্ণিমার তত জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, এক পর্যায়ে পড়ালেখায় ঠিক মত মনযোগি হতে পারেন না পূর্ণিমা। তবে সঠিক ভাবে না জানা গেলেও কিছুটা যানা যায় অভিনয়ের পাশাপাশি নাকি তিনি স্নাতক পাস করেছেন।
ব্যক্তি জীবনে পূর্ণিমা:
২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর পারিবারিকভাবে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি প্রথম কন্যা সন্তানের মা হন। তার মেয়ের নাম আরশিয়া উমাইজা।
চিত্রনায়িকা মৌসুমী:
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌাসুমী। তিনি ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছায়াছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পদার্পণ করেন। এই চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে ছিল অকাল প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহ। দুজনেরই এটি ছিল প্রথম চলচ্চিত্র। তিনি দুই শতাধিক ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ছোট পর্দার বেশ কিছু নাটক ও বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনয় করেছেন মৌসুমী। এছাড়া ২০০৩ সালের চলচ্চিত্র ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ পরিচালনার মাধ্যমে একজন পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। মৌসুমীর নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও আছে। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এছাড়াও অর্জন করেন একাধিক বাচসাস পুরস্কার ও মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার।
শিক্ষা জীবনে মৌসুমী:
চিত্রনায়িকা মৌসুমীর শিক্ষাজীবন নিয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি তিনি ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা জাদুকর জুয়েল আইচ ইউনিসেফ অ্যাডভোকেটের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যক্তি জীবনে মৌসুমী:
মৌসুমী ১৯৯৬ সালের ২ আগষ্ট তারিখে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ওমর সানীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তাদের ফারদিন এহসান স্বাধীন (ছেলে) এবং ফাইজা (মেয়ে) নামের ২টি সন্তান রয়েছে। মৌসুমী নিজের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান “মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন” দেখাশুনা করে থাকেন। এছাড়াও তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসাবে কাজ করে থাকেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার বসুন্ধরা সিটি মার্কেটের একটি পোশাক স্টল “লেভিস” এর মালিকানার দায়িত্বে রয়েছেন।
চিত্রনায়িকা শাবনূর:
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর। ৯০ দশক থেকে এ পর্যন্ত আসা চিত্র তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিত্র তারকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী রাতে’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে শাবনূরের। প্রথম ছবি ব্যর্থ হলেও পরে সালমান শাহের সাথে জুটি গড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।একে একে এ জুটি সুপারহিট ছবি দিতে থাকেন। সালমানের অকাল মৃত্যুতে সাময়িক ভাবে শাবনূরের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়লেও তার চিরায়ত বাঙালি প্রেমিকার ইমেজ এবং অসাধারণ অভিনয় ক্ষমতা তাকে দর্শকদের হৃদয়ে শক্ত আসন গড়তে সাহায্য করে। পরে রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস ও শাকিব খান এর সাথে জনপ্রিয় জুটি গড়ে অসংখ্য ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় ছবি উপহার দেন।
শাবনূর
ক্যারিয়ারের শেষের দিকে ছিপছিপে গড়ন ও সুশ্রী চেহারার এই অসম্ভব সুন্দরী নায়িকা মুটিয়ে গেলে সমালোচিত হন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়াতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তবে এবার বাংলাদেশে অনেক দিন রয়েছে। শোনা যাচ্ছে তিনি চলচ্চিত্রে কামব্যাক করার পরিকল্পনা করেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন এখন।শাবনূর ২০০৫ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত দুই নয়নের আলো ছবিতে অভিনয় করে তার ক্যারিয়ারের একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে রেকর্ড পরিমান ১০ বার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন।
শিক্ষা জীবনে শাবনূর:
জানা যায়নি এক সময়ের স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্রাভিনেত্রী শাবনুরের শিক্ষা জীবনের কোনো খবরও। তবে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় চলচ্চিত্র বিষয়ক পড়াশোনা করেছেন বলে খবর মিলেছে।
ব্যক্তি জীবনে শাবনূর:
২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূরের আংটি বদল হয় এবং ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাকে বিয়ে করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন ও নাগরিকত্ব লাভ করেন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ১ম ছেলে সন্তানের মা হন। তার ছেলের নাম আইজান নিহান।